IQNA

আফগানিস্তানের বিশ্ব ঐতিহ্য মিনারাত-ই-জাম

18:52 - October 13, 2022
সংবাদ: 3472642
তেহরান (ইকনা): আফগানিস্তানের সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী দাঁড়িয়ে আছে মিনারাত-ই-জাম। প্রায় সাড়ে আট শ বছরের প্রাচীন এই স্থাপত্যটি মধ্য আফগানিস্তানের ঘুর প্রদেশে অবস্থিত। পোড়া ইটে তৈরি প্রাচীন মিনারগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিনার। মিনারাত-ই-জামের বহির্ভাগ অপূর্ব জ্যামিতিক প্যাটার্ন, পোড়ামাটিতে খোদাই করা কুফিক বর্ণমালা, নকশি ক্যালিগ্রাফি, বর্ণিল টাইলস ও ফারসি বর্ণে অঙ্কিত কোরআনের আয়াতে আচ্ছাদিত।
অভ্যন্তরভাগে আছে শীর্ষে আরোহণের জন্য পেঁচানো সিঁড়ি। ২০০২ সালে ইউনেসকো মিনারাতে জামকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে। ২০২০ সালে ‘ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অরগানাইজেশন’ (আইসিস্কো) মিনারটিকে মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এটাই আইসিস্কোর তালিকাভুক্ত আফগানিস্তানের প্রথম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
মিনারাত-ই-জাম পর্বতসংকুল ঘুর প্রদেশের রাজধানী চাগচরণ থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং হেরাত থেকে ২১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিন হাজার মিটার উঁচু পাহাড়ে ঘেরা যে উপত্যকায় মিনারটির অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তার উচ্চতা  ১৯০০ মিটার। শীতকালে এখানে প্রচণ্ড শীত ও গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম থাকে। মিনারাতে জাম দাঁড়িয়ে আছে হারি রুদ ও জাম নদীর মোহনায়। হারি রুদ নদী ইরানকে ভেদ করে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই মিনারের পাদদেশ পানিতে প্লাবিত হয়।
 
ঐতিহাসিক এই মিনার নির্মাণ করেন সুলতান গিয়াস উদ্দীন ঘুরি। তিনি ছিলেন ভারতে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তনকারী সুলতান মুইজুদ্দিন মুহাম্মদ ঘুরির ভাই। ‘ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব আফগান স্টাডিজ’-এর সাবেক পরিচালক আর পি উইলসন মনে করেন, ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহানের বিরুদ্ধে সুলমান মুহাম্মদ ঘুরির বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে ১১৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ভাই সুলতান গিয়াস উদ্দিন মিনারটি নির্মাণ করেন। কেননা এই বিজয় ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে ইসলাম প্রচারের পথ খুলে দিয়েছিল। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, ঘুরিদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ফিরোজকুহ শহর জয়ের স্মারক হিসেবে ৬৫ মিটার বা ২১৩ ফুট উঁচু মিনারটি নির্মাণ করা হয়। এটি ছিল ঘুরিদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের ইসলামগ্রহণ বা নিকটস্থ কোনো মসজিদের আজান দেওয়ার জন্যও এটি নির্মিত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
 
প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিনারাত-ই-জামকে কুতুব মিনারের সঙ্গে তুলনা করেন। দিল্লি বিজয়ের স্মারক হিসেবে যা নির্মাণ করেছিলেন সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের ধারণা, কুতুব মিনার যেমন ‘কুওয়াতুল ইসলাম’ মসজিদের পাশে অবস্থিত, তেমন মিনারাত-ই-জামের পাশে ফিরোজকুহ জামে মসজিদ ছিল। কেননা মিনারের পাশেই পাকা ইটের একটি প্রাঙ্গণ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ১২২২ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলীয় বাহিনীর হাতে ফিরোজকুহ ধ্বংস হলেও মিনারাত-ই-জাম রক্ষা পায়। এ ছাড়া মিনারাত-ই-জামের নিকটবর্তী কুশকাক পর্বতে একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীর হিব্রু ভাষার শিলালিপি পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি প্রাচীন ইহুদি কবরস্থান।
 
ইউনেসকোর ভাষ্যমতে, মিনারাত-ই-জামের উদ্ভাবনী স্থাপত্য কৌশল ও শৈল্পিক অলংকরণ ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার বাইরে শিল্প ও স্থাপত্যশিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দৃষ্টিনন্দন উচ্চ অবকাঠামোটি মধ্য এশিয়ায় ইসলামী যুগের স্থাপত্যশিল্পের একটি অসামান্য উদাহরণ।
 
তথ্যঋণ : প্রবন্ধ : দ্য মিনারেত অব জাম অ্যান্ড দ্য ঘুরি; প্রতিবেদন : মিনারেত অ্যান্ড আর্কিওলজিক্যাল রিমেইন্স অব জাম
captcha