IQNA

'ঈমান' রক্ষায় অভিনয় ছাড়লেন আমির খানের মেয়ে

20:07 - July 01, 2019
সংবাদ: 2608809
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাঁচ বছরের জনপ্রিয়তায় ইতি টানলেন জায়রা ওয়াসিম। নিজের ইনস্টাগ্রামে সাড়ে পাঁচ পাতার একটি পোস্টে অভিনয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করলেন তিনি।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: সেই পোস্ট নিজের টুইটার, ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও শেয়ার করেছেন জায়রা। ফিল্মি কেরিয়ার তার বিশ্বাস এবং ধর্মের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সে কারণেই যে তিনি অভিনয় ছাড়ছেন, জায়রার পোস্টে বারবারই সে কথা উঠে এসেছে।

২০১৬ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘দঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করেন জায়রা ওয়াসিম। এটাই ছিল তার ডেবিউ ফিল্ম। এতো কম বয়সে তার অভিনয় দক্ষতা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-ন্যাশনাল চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর একসেপশনাল অ্যাচিভমেন্ট পেয়েছেন জায়রা।

গত মার্চে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে তার ছবি ‘দ্য স্কাই ইন পিঙ্ক’-এর শুটিংও শেষ হয়েছে। শুরু থেকেই জায়রার কেরিয়ার গ্রাফ ক্রমশ উঁচুতে উঠছিল। এমন সময়ে কেরিয়ারে ইতি টানার যে সিদ্ধান্ত জায়রা নিয়েছেন, তাতে হতবাক গোটা সিনে মহল।

জায়রা তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ইংরাজিতে যা লিখেছেন, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, পাঁচ বছর আগে তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা চিরকালের জন্য তার জীবন বদলে ফেলেছে। যে মুহূর্তে তিনি বলিউডে পা রেখেছিলেন, তার জন্য বিশাল জনপ্রিয়তার দরজা খুলে গিয়েছে।

তিনি সাধারণ মানুষের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠছিলেন, সাফল্যের প্রতীক হিসাবে তাকে তুলে ধরা হয়েছিল এবং প্রায়ই তাকে তরুণদের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হত। কিন্তু, তিনি যা করতে চেয়েছিলেন বা হতে চেয়েছিলেন, তার কোনওটাই এগুলো নয়, তার কাছে সাফল্য এবং ব্যর্থতার যা ধারণা, তিনি সবে তা বুঝতে শুরু করেছেন।

এর পর জায়রা লিখেছেন,‘আমি বুঝতে পেরেছি আমি বহু দিন ধরেই অন্য একজন হয়ে ওঠার চেষ্টা করে চলাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছি, যদিও আমি এখানে সুন্দর ভাবে ফিট হতে পারব কিন্তু আমি এটার জন্য নয়।

এই ফিল্ড আমাকে অনেক ভালোবাসা, সমর্থন, প্রশংসা দিয়েছে, কিন্তু এই ফিল্ড আর যেটা করেছে তা হল আমাকে ক্রমশ অবমাননার দিকে ঠেলে দিয়েছে, ক্রমশ অসচেতন ভাবে আমি আমার ঈমান (বিশ্বাস)-এর থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমি এমন একটা পরিবেশে কাজ করতাম যা ক্রমাগত আমার ইমানের মাঝে এসে দাঁড়াত, ধর্মের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।’

তাতে অবশ্য জায়রা থেমে যাননি। তার পোস্ট থেকে জানা গিয়েছে, ক্রমাগত সেই বাধার সঙ্গে মানসিক ভাবে লড়তে শুরু করেন তিনি। বারবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এমন একটা ফিল্ডে তার কাজের সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক এবং সেটা কখনও তার জীবনকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু ‘নিজের উপর থেকে সমস্ত বারাখা (আশীর্বাদ)’ হারিয়ে ফেলছিলেন, লেখেন জায়রা।

এর পর জায়রার সংযোজন,‘কুরআনের বিশাল এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের মধ্যে আমি তৃপ্তি এবং শান্তি খুঁজে পেয়েছি। প্রকৃতপক্ষে হৃদয় তার সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান, তার গুণাবলী, তার করুণা এবং তার আদেশের জ্ঞান অর্জনে শান্তি পায়।’

নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বদলে আল্লাহর উপরেই যে ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন জায়রা, তার উল্লেখও রয়েছে পোস্টে। এতদিন নিজের বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা করে কী ভাবে সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে নিজের জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি, সেটারও উল্লেখ রেখেছেন ওই পোস্টে।

শেষে সকলের প্রতি জায়রার উপদেশ— সাফল্য, খ্যাতি, সম্পদ যে পর্যায়ে পৌঁছে যাক না কেন, তাতে যেন কখনও শান্তি এবং নিজের বিশ্বাস না হারিয়ে যায়। বহুদিন থেকে যে কারণেই হোক জায়রা যে শান্তিতে ছিলেন না তা অবশ্য বছর খানেক আগেই তার অন্য একটি পোস্ট থেকে জানা গিয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালে নিজেকে ভীষণ অবসাদগ্রস্ত জানিয়ে পোস্ট করেছিলেন জায়রা।

সেই পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন, গত চার বছর ধরে দিনে পাঁচ বার করে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খেতে হয় তাকে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুম হয় না। এমনকি মানসিক অবসাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কখনও কখনও তার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন জায়রা। কিন্তু এত অবসাদ কেন তাকে গ্রাস করেছিল তা তখন স্পষ্ট করেননি তিনি।   iqna

captcha