IQNA

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুশান খ্রিস্টধর্ম থেকে যেভাবে ইসলামের ছায়াতলে

7:45 - September 14, 2018
সংবাদ: 2606713
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আপনি তখন কি করবেন যখন আপনার মা আপনাকে বলবেন, ‘তুমি যদি একজন মাদক ব্যবসায়ীকে বিয়ে কর তাতে আমার কিছু যায় আসে না, তবুও তুমি কোনো মুসলিমকে বিয়ে করো না।’

মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুশান খ্রিস্টধর্ম থেকে যেভাবে ইসলামের ছায়াতলে

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: সুশান চারল্যান্ডের বয়স যখন ১৭ বছর এবং তিনি যখন অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তখন তার মা তাকে এই কথাগুলো বলেছিলেন।

অবশ্য তখন ইসলাম তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না। তিনি বলেন, ‘ইসলাম সম্পর্কে তখন আমার মনে হত এটি সংঘাতপূর্ণ, যৌনতায় ভরপুর এবং বিদেশি একটি ধর্ম’।

এর দুই বছর পর তার বয়স যখন ১৯ বছরে পৌছায় কোনও মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ছাড়াই সুশান একজন খ্রিস্টান ব্যাপ্টিস্ট ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্বেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

সুশান ছিল এমন এক মেয়ে যে কিনা ১৪ বছর যাবত খ্রিস্টান চার্চের সংস্পর্শে থেকে বড় হয়েছেন। তিনি বড় হয়েছেন এমন মানুষদের সংস্পর্শে থেকে যারা খ্রিস্টানপন্থী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল এবং প্রতি রাতে তারা সৃষ্টিকর্তার সাথে কথা বলত এরকম দাবী করত।

শুকরের মাংসের ডিনার?

এক রাতে সুশানের মা তাকে বললো আজ তারা ডিনারে শুকরের মাংস খাবেন। সেই রাতেই তার মা সুশানের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে প্রথম জানতে পরেন।

‘আমার মা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, কিন্তু তিনি হঠাৎই কাঁদতে শুরু করেন।’ এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই সুশান তার মাথায় স্কার্ফ পরিধান করা শুরু করেন।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরবর্তী আট বছর সুশান এবং তার মায়ের সম্পর্ক ধীরে ধীরে চিড় ধরতে থাকে। তবে বর্তমানে তারা একে অন্যের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছেন।

সুশান বলেন, ‘এখন আমার মা মাঝে মধ্যে আমার জন্য স্কার্ফ কিনে আনেন এবং আমার সন্তানদের জন্য ঈদের উপহার পাঠান।’

সুশান ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বলেন, ‘ইসলাম আমার মন, শরীর এবং আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি যা খ্রিস্টান থাকার সময়ে আমি অনুভব করেছিলাম।’

তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে সৃষ্টিকর্তার যে রূপ আমার কাছে ধরা পড়ে তা আমাকে অভিভূত করেছিল।’

পেশা এবং বিবাহ

সুশান চারুকলা এবং বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। পশ্চিমা মুসলিম নারীদের নেতৃত্বের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে তিনি ২০০৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি এবং সমাজনীতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত আছেন। সেখানে অবশ্য তিনি লিঙ্গ বৈষম্য এবং ধর্মের সামাজিকরণ বিষয়ের উপরও পাঠদান করেন।

ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রতি ভালোবাসা:

কোনও দ্বিধা ছাড়াই তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং উৎসাহমূলক যে মানুষটি এসেছে তিনি একজন মুসলিম এবং নিশ্চিতভাবেই আমি তার সাথে একটি সুন্দর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়েছি।’

২০০২ সালে সুশান অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরের ওয়ালীদ আলী নামের এক মুসলিম আইনজীবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ওয়ালীদ আলীর পিতামাতা ছিলেন মিশরীয় বংশোদ্ভূত। তিনি আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন এবং মেলবোর্ন শহরের একটি বড় আইনি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

বর্তমানে ওয়ালীদ আলী মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন।

অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম অধিবাসীরা

২০০৬ সালে ওয়ালীদ আলী অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী বিশ বছরের কর্মপন্থা নির্ধারনী একটি ফোরামে আমন্ত্রিত ৯০জন মুসলিমের একজন হিসেবে যোগদান করেন।

২০০৭ সালে দ্যা বুলেটিন ম্যাগাজিন ওয়ালীদ আলীকে ‘১০০ জন বুদ্ধিমান’ মানুষের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছিল।

ওয়ালীদ আলী এবং সুশানের বর্তমানে আয়েশা নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

সুশান তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মুসলিম হওয়ার সময় ওয়ালীদ আমার পাশে ছিল না, কারণ আমি নিজেই ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিই’।

অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘সালমা ক্যাফেতে’ সুশান নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানটির একজন বিচারকও বটে। দেশটির বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত ইসলামের উপর আলোচনা করেন।

সুশানকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন চার্চ, ইহুদী দলসমূহ এবং সামাজিক সংগঠনগুলো আমন্ত্রণ জানায়।

বুদ্ধিগত স্বাধীনতা

সুশান মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম সংখ্যা লঘু এবং ইসলাম সম্পর্কে গবেষণার পাশাপাশি তৃণমূলের তরুণ তরুণীদের নিয়েও গবেষণা করেন। ইসলামিক কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার একজন সদস্য হিসেবে তিনি দেশটির যুবক সম্প্রদায়ের ইসলাম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও গবেষণা রত আছেন।

তিনি দাওয়া এবং আলোচনা নামক একটি সংগঠনের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ তাকে ‘আগামীর মুসলিম নেত্রী’ অভিধায় ভূষিত করে।

সুশান তার আধ্যাত্মিক চিন্তা সম্পর্কে বলেন, আমি এ ব্যাপারে বুদ্ধিদীপ্ত স্বাধীনতা অনুভব করি।

২০০৪ সালে সুশান অস্ট্রেলিয়ার ‘মুসলিম অফ দ্যা ইয়ারে’ ভূষিত হন এবং ২০০০ ডলার পুরষ্কার জিতেন। তিনি পুরস্কারের অর্থ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় দান করে দেন। এবাউট ইসলাম।

captcha